ব্যুরো রিপোর্ট: ফিফা বিশ্বকাপে রাউন্ড অব সিক্সটিনের একপেশে ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে বিধ্বস্ত করল ব্রাজিল। তিতের প্রশিক্ষণাধীন দল পৌঁছে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। ম্যাচ শুরুর আগেই গোটা দলকে উদ্বুদ্ধ করতে বার্তা দিয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। এরপরই স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ উঠল সাম্বা ঝড়।প্রথমার্ধেই ব্রাজিল এগিয়ে গিয়েছিল ৪-০ গোলে।
যেভাবে রিচার্লিসন, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, নেইমার, রাফিনহা একের পর আক্রমণ তুলে আনছিলেন তাতে এই ব্যবধান হাফ ডজন হলেই অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে এদিন রীতিমতো ছেলেখেলা করল ব্রাজিল। ১৯৫৪ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের ম্যাচে ব্রাজিল প্রথমার্ধে চার গোল পুরে ফেলল প্রতিপক্ষের জালে।
২০১৪ সালে শেষবার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে জার্মানি প্রথমার্ধে ৫-০ গোলে এগিয়ে ছিল। সেই লজ্জা ঘুচিয়ে এবার বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য থেকে আপাতত তিন ধাপ দূরে ব্রাজিল।ক্যামেরুনের কাছে ব্রাজিলের যে দল হেরেছিল সেই দলের থেকে মিলিতাও বাদে ১০ জনকেই এদিন প্রথম একাদশে রাখেননি তিতে।
গোড়ালির চোট সারিয়ে এদিন মাঠে ফিরলেন নেইমার। গোলও করলেন। সাত মিনিটে ব্রাজিল এগিয়ে গিয়েছিল ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোলে। এরপর ১৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে নেইমারের গোলে ব্যবধান বাড়ে। ২৯ নিনিটে অত্যন্ত কুশলী রিচার্লিসন ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন ৩-০ ব্যবধানে।
৩৬ মিনিটে লুকাস পাকেতা ৪-০ করেন। এর পরেও দক্ষিণ কোরিয়ার গোলকিপার কিম সেউং জিউ কয়েকটি ভালো সেভ করেন। বিরতিতে চার গোলে ব্রাজিল এগিয়ে ছিল। মজার ব্যাপার হলো, গ্রুপ পর্যায়ে ব্রাজিল সর্বসাকুল্যে পেয়েছিল ৩ গোল। এদিন প্রথমার্ধে দক্ষিণ কোরিয়াকে দাঁড়াতেই না দিয়ে চারবার প্রতিপক্ষের গোলে বল পাঠাল ব্রাজিল। একেকটি গোলের পর ব্রাজিলিয়ানদের সেলিব্রেশনও ছিল তাক লাগানোর মতো।
এমনকী ফুটবলারদের কাঁধে হাত রেখে গোলের সেলিব্রেশনে নাচতে দেখা গেল তিতেকেও।দক্ষিণ কোরিয়ার ভাগ্য লিখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল প্রথমার্ধেই। প্রথমার্ধে ব্রাজিলীয় গোলকিপার অ্যালিসনকে পরীক্ষার মুখেই ফেলতে পারেননি কোরিয়ার ফুটবলাররা। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান কমানোর মরিয়া চেষ্টা চালায় এশিয়ার দেশটি। কিন্তু অ্যালিসনের দক্ষতা ও ব্রাজিলের দুর্ভেদ্য রক্ষণ কোরিয়ানদের হতাশা বাড়াতে থাকে।
৭৬ মিনিটে পাইক সেউং হো-র গোলে ব্যবধান কমলেও সমতা ফেরানোর পরিস্থিতিই তৈরি করতে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়া। ব্রাজিলও কয়েকটি ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আর গোল আসেনি। তা সত্ত্বেও জাপানের পর এদিনই বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়ে গেল দক্ষিণ কোরিয়ার। ব্রাজিল জেতায় কোয়ার্টার ফাইনালে নেইমারদের পরবর্তী প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া।
নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর ক্রোটরা টাইব্রেকারে জাপানকে ৩-১ গোলে পরাস্ত করে শেষ আটের টিকিট কনফার্ম করেছে। ব্রাজিলের জয় পাশাপাশি বসে দেখলেন কাফু, রবার্তো কার্লোস, রোনাল্ডোরা। উল্লেখ্য, কাফুর অধিনায়কত্বেই শেষবার ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেছে ২০০২ সালে।এদিন খেলা শুরুর আগে ফুটবল সম্রাট পেলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্রাজিলকে উজ্জীবিত করেন।
১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ চলাকালীন সুইডেনের রাস্তায় নিজের ছবি পোস্ট করে পেলে লিখেছেন, আমিও যেমন সেবার বাবাকে দেওয়া কথা রাখার কথা চিন্তা করতে করতে সুইডেনের রাস্তায় হাঁটছিলাম, আমি নিশ্চিত ব্রাজিল দলের অনেকেই তেমনই প্রমিস করে এবারের বিশ্বকাপ খেলছেন। তাঁরাও প্রথমবার বিশ্বজয়ের স্বাদ পেতে চান।
রাউন্ড অব সিক্সটিনের খেলার দিকে তিনি সাও পাওলোর হাসপাতাল থেকেই চোখ রাখবেন এবং ব্রাজিলের জয়ের প্রার্থনা করবেন সে কথাও জানিয়েছেন ফুটবল সম্রাট। এদিন ব্রাজিল যে শিল্পের ছোঁয়া দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নিল তাতে পেলের মতো আপ্লুত ব্রাজিল ভক্ত তথা ফুটবলপ্রেমীরা। খেলার শেষে পেলের আরোগ্য কামনার বার্তাও দেয় ব্রাজিল দল।