ব্যুরো রিপোর্ট: বিশ্বায়নের যুগে ডিভোর্সের ছোঁয়া যেখানে শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশ করে গেছে সেখানে এই জায়গা যেন একটু অন্যরকম।
প্রতিনিয়ত যেখানে প্রায়ই ডিভোর্সের ঘটনা শোনা যায় সেখানে এই স্থানটি একেবারে ব্যতিক্রম। এখানে ডিভোর্স হয়েছে ৩০০ বছরের মধ্যে মাত্র একবার।
অথচ এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের আইনি অধিকার রয়েছে ডিভোর্স দেওয়ার। তাহলে এমন উল্টোপুরাণ কেন? কোথায় রয়েছে এই জায়গা? কেন এখানে ডিভোর্স হয়না নীচে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হোলো।
বিশেষ স্থানটি কোথায়?
এই ব্যতিক্রমী ঘটনা দেখতে পাওয়া যায় রোমানিয়ার বিয়ারটান নামক ছোট্ট একটি গ্রামে। এখানে গত ৩০০ বছরে মাত্র একটি ডিভোর্সের ঘটনা ঘটেছে। এখানে ডিভোর্সের জন্যও আবেদন জমা পরে ঠিক কিন্তু তা সম্পূর্ণ হয় না। তার কারণ হলো ম্যারিটাল প্রিজন।
ম্যারিটাল প্রিজন কি?
বিয়ারটান গ্রামের নিয়ম অনুযায়ী ডিভোর্সের জন্য আবেদনকারী স্বামী-স্ত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে একটি ছোট ঘরে কিছুদিন থাকতে হয়। যাকে বলা হয় ম্যারিটাল প্রিজন।
ডিভোর্সের জন্য প্রথমে যেতে হয় স্থানীয় চার্চের বিশপের কাছে। তিনি ডিভোর্সের সঠিক কারণ জানতে চান। তারপর ছয় সপ্তাহের জন্য ম্যারিটাল প্রিজনের ছোট ঘরে আবেদনকারী স্বামী -স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন।
কি হয় ম্যারিটাল প্রিজনে?
ম্যারিটাল প্রিজনে বিছানা থেকে শুরু করে খাবার টেবিল পর্যন্ত সবকিছুই থাকে একটি করে। তাই প্রিজনারদের এখানে সবকিছু ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয়।
এখানে তারা চেষ্টা করেন নিজেদের মধ্যে থাকা সমস্যাগুলিকে মিটিয়ে নিয়ে একে অপরের সাথে মানিয়ে চলার। বাইরের পৃথিবীর সাথে এই প্রিজনের কোন সম্পর্ক থাকে না। এমনকি বাইরের কারোর সাথে যাতে তারা মিশতে না পারেন তার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা বিশপ করেন।
বিশেষ নিয়ম
• নিয়ম অনুযায়ী ম্যারিটাল প্রিজনে থাকার পরেও যদি একে অপরের সাথে মানিয়ে নিতে না পারে তাহলে অবশ্যই ডিভোর্সের অনুমোদন দেওয়া হয়।
• বিয়ারটান গ্রামে শুধুমাত্র পুরুষরাই জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করেন। সদ্য ডিভোর্স প্রাপ্ত মহিলার সমস্ত দায়িত্ব প্রাক্তন স্বামীর উপর দেওয়া হয়।
• এমনকি স্বামীর রোজগারের অর্ধেক উপার্জনও তুলে দিতে হয় প্রাক্তন স্ত্রীর হাতে।
• এই ম্যারিটাল প্রিজনে থাকতে হয় পুরো ছয় সপ্তাহ অর্থাৎ দেড় মাস।
তবে বিয়ারটানবাসীরা ম্যারিটাল প্রিজনে বড়জোর দুই সপ্তাহ থাকে এবং তার মধ্যে নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান করে নেন।
কারণ তারা বদ্ধপরিকর তাদের সমাজ এবং বংশ পরম্পরার নিয়ম টিকিয়ে রাখতে। এই কারণেই ছোট্ট গ্রামটি সারা বিশ্বের কাছে একটু ব্যতিক্রম রূপেই পরিচিত।