ব্যুরো রিপোর্ট: হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা থেকে রক্ষা পেল ইংল্যান্ড। বেন স্টোকস-জনি বেয়ারস্ট্রো-স্টুয়ার্ট ব্রডের সৌজন্যে পিঙ্ক টেস্টে লজ্জার হার থেকে রক্ষা পেল জো রুটের দল। অ্যাশেজের প্রথম তিনটি টেস্টের মতো সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে চতুর্থ টেস্টে মাথা নীচু করে শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়তে হল না ইংল্যান্ড’কে।
পিঙ্ক টেস্টে খানিকটা সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে মাঠ ছাড়তে পারল জো রুটের দল। তবে, এই টেস্টে হার বাঁচাতে ভাগ্যের সাহায্য নিঃসন্দেহে পেয়েছে ইংল্যান্ড। সিডনি’তে চলতি অ্যাশেদের চতুর্থ টেস্ট জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল মাত্র এক উইকেট। ক্রিজে ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড (৮*) এবং জেমস অ্যান্ডারসন (০*)।
কয়েকটি ওভার আর সুযোগ পেলেই ইংল্যান্ডের শেষ উইকেটের পতন ঘটাতে পারত প্যাট কামিন্সের দল। কিন্তু ভাগ্যের জোরে এই একটা উইকেটই হারের মুখ থেকে রক্ষা করল ইংল্যান্ড’কে।উসমান খোয়াজা’র দুরন্ত শতরানের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ৪১৬/৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া।
খোয়াজা ছাড়াও এই ইনিংসে রান পেয়েছিলেন স্টিভ স্মিথ। ৬৭ রান আসে স্মিথের ব্যাট থেকে। দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (৩০) এবং মার্কাস হ্যারিস (৩৮) বড় রান না পেলেও স্মিথ এবং খোয়াজা’র চওড়া ব্যাটের সুবাদে রানের পাহাড় গড়তে সমস্যা হয়নি প্যাট কামিন্সের দলের।
চলতি অ্যাশেজে প্রথম টেস্ট খেলা ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন। একটি করে উইকেট পেয়েছেন জেমস অ্যান্ডারসন, মার্ক উড এবং জো রুট।অস্ট্রেলিয়া’র ৪১৬ রানের জবাবে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার কোনও নির্ভারতা দিতে পারেনি।
৩৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দলকে বিপাকে ফেলেন দুই ওপেনার হাসিব হামিদ, জ্যাক ক্রলি, ডেভিড মালান এবং জো রুট। বেন স্টোকস এবং জনি বেয়ারস্ট্রো ছাড়া ইংল্যান্ডের কোনও ব্যাটসম্যান-ই অজি পেস অ্যাটাকের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।
ব্রিটিশ দলের একের পর এক ব্যাটসম্যান যখন অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিরুদ্ধে সঠিক শট কোনটা হবে সেটাই খুঁজে বের করতে পারছিলেন না তখন জনি একাই ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন। দীর্ঘদিন পর এই সিরিজের মধ্যে দিয়ে ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করা বেন স্টোকস ৬৬ রান করেন।
লোয়ার অর্ডারে ৩৯ রান করে কিছুটা নির্ভরতা দেওয়ার চেষ্টা করেন মার্ক উড। একমাত্র এই তিন জনের সুবাদেই প্রথম ইনিংস শেষে লড়াইয়ে ছিল ইংল্যান্ড। তাদের ইনিংস শেষ হয় ২৯৪ রানে। মেলবোর্ন টেস্টের নায়ক স্কট বোল্যান্ড ৪টি উইকেট শিকার করেন। দু’টি করে উইকেট পান প্যাট কামিন্স এবং নাথান লিয়ঁ,
একটি করে উইকেট শিকার মিচেল স্টার্ক এবং ক্যামরুন গ্রিনের।১২২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। ৬ উইকেটের বিনিময়ে ২৬৫ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ডের জন্য ৩৮৮ রানের টার্গেট সেট করে তারা।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসে শতরান করেন উসমান খোয়াজা। ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। ২০১৯ সালে শেষ বার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন খোয়াজা। ট্রাভিস হেড সিডনি টেস্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার কারণে দলে সুযোগ হয়েছিল খোয়াজার।
ঐই বাম হাতি ব্যাটসম্যান ছাড়াও রান পেয়েছেন ক্যারুন গ্রিন (৭৪)। ইংল্যান্ডের হয়ে এই ইনিংসে চারটি উইকেট নেন বাম হাতি স্পিনার জ্যাক লিচ। বাকি দু’টি উইকেট নিয়েছিলেন মার্ক উড।জয়ের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে মাঠে নামা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং দুর্বলতা ফের প্রকট হয়।
দীর্ঘ দিন অফ ফর্মে থাকা জ্যাক ক্রলি (৭৭) ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও হাসিব হামিদ, জো রুট, ডেভিড মালান, জস বাটলার-এর প্রত্যেকেই ক্রিজে এসেছেন কিছু সময় কাটিয়ে ফের ফিরে গিয়েছেন ড্রেসিং রুমে। অনেকটা বাড়ি থেকে পার্কে ঘুরতে আসার মতো।
ক্রলি ছাড়া প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা জনি বেয়ারস্ট্রো করেন ৪১ রান। বিশ্বের সেরা অল-রাউন্ডার বেন স্টোকসের ব্যাট থেকে আসে ৬০ রান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি উইকেট নেন। দু’টি করে উইকেট নেন নাথান লিয়ঁ এবং প্যাট কামিন্স।
স্টিভ স্মিথ এবং ক্যামরুন গ্রিন পান একটি করে উইকেট।ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের নবম উইকেটের পতন হয়েছিল যখন তখন ম্যাচে বাকি আর ১১টি বল। ক্রিজে ছিলেন দুই টেল এন্ডার স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জিমি অ্যান্ডারসন।
চতুর্থ টেস্ট জয়ের জন্য এই ১১টি বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র এক উইকেটের। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার দুর্ধর্ষ বোলিং ইউনিট সেই কাজ সমপন্ন করতে পারেনি। নতুন নামা জেমস অ্যান্ডারসন কোনও মতে ৬টি বল টিকে গিয়ে ইংল্যান্ড
কে চলতি অ্যাশেজে চতুর্থ হারের মুখ থেকে রক্ষা করলেন। দুই ইনিংসেই শতরান করার সৌজন্যে ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছেন উসমান খোয়াজা। এখন এটা দেখার ট্রাভিস পঞ্চম টেস্টের আগে সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁকে আদৌ দলে জায়গা দিতে পারে কি না, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক’রা।