ব্যুরো রিপোর্ট: আইপিএলে ফের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে দিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। সেই সঙ্গে প্লে অফের দৌড়ে ভেসে থাকল শ্রেয়স আইয়ারের দল। ৫২ রানে জিতে ২ পয়েন্ট নিশ্চিত করে ১২ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার সাতে উঠে এলো কলকাতা নাইট রাইডার্স।
ঈশান কিষাণ অর্ধশতরান পেলেও বাকিরা ব্যর্থ। প্যাট কামিন্স নিলেন ৩ উইকেট।জয়ের জন্য ১৬৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারের শেষ বলে রোহিত শর্মার উইকেটটি তুলে নেন টিম সাউদি। শেল্ডন জ্যাকসন একহাতে বল তালুবন্দি করে ক্যাচের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আম্পায়ার ক্রিস গাফানি সাড়া দেননি।
রিভিউ নেন কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। আল্ট্রাএজ দেখার সিদ্ধান্ত নেন টিভি আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড। স্নিকোমিটারের দাগ দেখে নিশ্চিত হয়ে তিনি রোহিতকে আউট ঘোষণার নির্দেশ দেন। যদিও এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি রোহিত, বল তাঁর ব্যাটে লাগেনি বলে নিশ্চিত ছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক।
যে দাগ দেখে আউট দেওয়া হয় সেই শব্দ বল রোহিতের কাছে আসার আগেই শোনা যাচ্ছিল রিপ্লেতেও। ফলে এই সিদ্ধান্তের জন্য আম্পায়ার ও প্রযুক্তিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুষতে থাকেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।রোহিত ৬ বলে ২ রান করে আউট হন। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে তিলক বর্মাকে ফেরান আন্দ্রে রাসেল।
৫ বলে ৬ রান করে দলের ৩২ রানের মাথায় ফেরেন তিলক। ১০.৩ ওভারে রামনদীপ সিং রাসেলের দ্বিতীয় শিকার। ১৬ বলে ১২ রান করে তিনি দলের ৬৯ রানের মাথায় আউট হন। ওই ওভারের বাকি তিন বলে তিনটি চার হাঁকান টিম ডেভিড।
তবে তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৯ বলে ১৩ রান করে তিনি বরুণ চক্রবর্তীর বলে অজিঙ্ক রাহানের হাতে ক্যাচ দিলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের স্কোর দাঁড়ায় ১২.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৮৩।অপর প্রান্তে উইকেট পড়লেও ক্রিজ আঁকড়ে থেকে দায়িত্বশীল ইনিংস খেলতে থাকেন ঈশান কিষাণ।
৪১ বলে তিনি অর্ধশতরান পূর্ণ করেন। আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে কিষাণের জুটিতে ১৪ ওভারে ১০০ রানে পৌঁছায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ১৫তম ওভারে ম্যাচের মোড় পুরোপুরি কেকেআরের দিকে ঘোরান প্যাট কামিন্স। প্রথম বলেই কিষাণকে ফেরান। পাঁচটি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে তিনি ৪৩ বলে ৫১ করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন।
১০০ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেটটি পড়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। এই ওভারের চতুর্থ বলেই ড্যানিয়েল স্যামস কট বিহান্ড হন ২ বলে ১ রানে। ১০২ রানে পড়ে মুম্বইয়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেট। কেন না এই ওভারের শেষ বলে কামিন্স তুলে নেন মুরুগান অশ্বিনকেও (২ বলে ০)।
কামিন্সের ১৫তম ওভারে ২ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেওয়ায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের শেষ ৫ পাঁচ ওভারে দরকার ছিল ৬৪। কায়রন পোলার্ডই ছিলেন স্বীকৃত ব্যাটার। প্রথম ৬ ওভারে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৩৭। ৭ থেকে ১৫ ওভারের মধ্যে ৬৫ রান তোলার ফাঁকে হারায় ৫ উইকেট। ১৭তম ওভারের শেষ বলে রান আউট হন কুমার কার্তিকেয় (৫ বলে ৩)।
১৭.২ ওভারে আন্দ্রে রাসেলের বলে পোলার্ডের ক্যাচ শেল্ডন কটরেল মিস করলেও রান আউট হয়ে যান পোলার্ড। ১৬ বলে ১৫ রান করে তিনি আউট হতেই ১১৩ রানে নবম উইকেট হারায় মুম্বই। পরের বলে ফের রিঙ্কু সিংয়ের থ্রোয় জসপ্রীত বুমরাহ রান আউট হলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স গুটিয়ে যায় ১১৩ রানেই।
১৭.৩ ওভার টিকল রোহিত শর্মার দল, দুটি ম্যাচ জেতার পর ফের হার পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের।কামিন্স ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। আন্দ্রে রাসেল ২.৩ ওভারে ২২ রানে নিলেন ২ উইকেট। টিম সাউদি তিন ওভারে ১০ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন। বরুণ চক্রবর্তী ৩ ওভারে ২২ রান খরচ করে নেন ১ উইকেট।
সুনীল নারিন ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি। পরাজয়ের জন্য ব্যাটিংয়ের দিকে আঙুল তুললেন রোহিত শর্মা। প্রাক্তন ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রীর উপলব্ধি, জসপ্রীত বুমরাহর স্পেলই তাতিয়ে দিয়েছে কেকেআরকে। উল্লেখ্য, এদিন প্রথম একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন এনে বাজিমাত কেকেআরের।
নেট রান রেটে (-০.০৫৭)-এ কেকেআরার পিছনে ফেলল পাঞ্জাব কিংসকে (-০.২৩১)। পাঞ্জাব চলে গেল আটে, চেন্নাই নয়ে। কেকেআরের ঝুলিতে ১২ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট। দিল্লি (নেট রান রেট ০.১৫০) ও সানরাইজার্স (নেট রান রেট -০.০৩১) একটি করে ম্যাচ কম খেলেছে। পাঞ্জাবও খেলেছে ১১টি ম্যাচ।
এর আগে, টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান তুলেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ভেঙ্কটেশ আইয়ার ও নীতীশ রানা দুজনেই ৪৩ রানে আউট হন। চার ওভারে ১টি মেডেন-সহ ১০ রানের বিনিময়ে পাঁচটি উইকেট নেন জসপ্রীত বুমরাহ। ১৮তম ওভারে তিনটি উইকেট নেন কোনও রান না দিয়েই।
২০তম ওভারে দেন মাত্র ১ রান। বুমরাহর বোলিং আইপিএলে সেরা বোলিং ফিগারের তালিকার প্রথম পাঁচে চলে এলো। বুমরাহ রইলেন অনিল কুম্বলের নজিরের (৫ রানে ৫ উইকেট) পরেই। কুমার কার্তিকেয় নেন ২টি উইকেট। বুমরাহর টি ২০ কেরিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার দেখে উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন ভারতীয় কোচ থেকে শুরু করে তাঁর স্ত্রী সঞ্জনাও।