যাচ্ছেন মমতা, নন্দীগ্রাম থেকেই শুরু হতে চলেছে তৃণমূলের ‘জিতবে ত্রিপুরা’র লড়াই

যাচ্ছেন মমতা, নন্দীগ্রাম থেকেই শুরু হতে চলেছে তৃণমূলের ‘জিতবে ত্রিপুরা’র লড়াই

ব্যুরো রিপোর্ট:  শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম থেকে লড়াইয়ের চূড়ান্ত ঘোষণা করার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখান থেকে লড়াইয়ের কথা জানিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সেই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো পরাজিত হন। কিন্তু নন্দীগ্রামকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। ত্রিপুরায় লড়াই করতে গিয়েও সেই নন্দীগ্রামের কথাই ঘুরে ফিরে আসছে।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ত্রিপুরার ভাষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি নানা বিষয়ে মিল। কেউ কেউ আবার ত্রিপুরাকে বাংলার অঘোষিত উপনিবেশও বলেন। বাংলার সঙ্গে ত্রিপুরার এমন একটা বিষয়ের মিল রয়েছে, যা অনেকের অজানা।

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের মত ত্রিপুরাতেও রয়েছে ‘নন্দীগ্রাম’। যা রয়েছে উত্তর-পূর্বে ওই কাজ্যের দক্ষিণের জেলার সাব্রুমে। বাংলায় নন্দীগ্রাম একটি বিধানসভা কেন্দ্র, কিন্তু ত্রিপুরায় তা একটি পঞ্চায়েত মাত্র।

ত্রিপুরা তৃণমূল সূত্রে খবর, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সেখানকার অখ্যাত নন্দীগ্রামকেই লাইম লাইটে নিয়ে আসতে চাইছেন। সাব্রুমের নন্দীগ্রামকে ভিত্তি করেই ত্রিপুরায় বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেবেন তিনি।

তৃণমূল সূত্রের দাবি, খুব শীঘ্রই সেখানে যেতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অগাস্টের শেষের দিকে না হলে সেপ্টেম্বরের প্রথমের দিকে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে গিয়ে বেশ কয়েকদিন থাকতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।

তবে তিনি ত্রিপুরায় গিয়ে সাব্রুমের নন্দীগ্রামে যাবেন বলে সূত্রের খবর। সাব্রুমের নন্দীগ্রামে গিয়ে বাংলার নন্দীগ্রামের আওয়াজ তুলবেন। ওই নন্দীগ্রাম থেকেই ‘জিতবে ত্রিপুরা’ স্লোগানকে ছড়িয়ে দেবেন ত্রিপুরায়।


বাংলার তৃণমূলের এক শীর্ষ স্থানীয় নেতা জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় গিয়ে বেশ কয়েকদিন থাকতে পারেন। সেই সময় তিনি ত্রিপুরা প্রতিটি জেলা ও মহকুমায় যেতে পারেন।

পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দলীয় কার্যালয় খোলার তদারকিও করতে পারেন। কেননা ২০২৪-এর আগে যেসব রাজ্যগুলিতে তৃণমূলের কিছুমাত্র সম্ভাবনা রয়েছে, তার মধ্যে ত্রিপুরাকে একেবারে প্রথমেই রাখতে চান রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

ত্রিপুরার সাব্রুমের নন্দীগ্রামে তৃণমূলের জন্য উর্বর জমি তৈরিই আছে বলে মনে করেন, সেখানকার বিরোধী রাজনীতিকদের অনেকে। নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে ছিল। সেখানে ঘাসফুলের তিন জন নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন।

২০১৬-য় বামেদের দখলে থাকা ত্রিপুরায় নন্দীগ্রাম থেকে জিতেছিলেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে একজন চিনু দাস, তিনি নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যা। তিন নম্বর ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূলের সদস্যরা জয়ী হয়েছিলেন।

তিননম্বর ওয়ার্ডের জন প্রতিনিধি পিঙ্কু দে ২০১৭ সালে বিজেপিতে চলে যান। কিন্তু তৃণমূলের পতাকা আগলে রেখেছেন মহিলা জন প্রতিনিধি চিনু দাস। এই মুহূর্তে পঞ্চায়েত সদস্য না থাকলেও গ্রামে তৃণমূলের ব্যাটন এখন তাঁর হাতেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চিনু দাসের স্বামী বেচারাম দাসও একজন কট্টর তৃণমূল কর্মী। নিজের বাড়িতে খুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়। সেই কারণে বাংলা থেকে ত্রিপুরায় যাওয়া তৃণমূল নেতারা বারবার ছুটে যান সাব্রুমের নন্দীগ্রামে।

পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে একটা সময়ে ছিল বামেদের দাপট। কিন্তু ২০০৬ সালের শেষের দিকে সেখানে কেমিক্যাল হাব তৈরির এক বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। যদিও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আপত্তি থাকলে সেখানে কোনও শিল্প তৈরি করা হবে না।

তারপরেও সেখানে বাড়তে থাকে রাজনৈতিক উত্তাপ। সেই পরিস্থিতি খুনোখুনির পর্যায়ে চলে যায়। তৃণমূলের তরফে সেই সময় নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বামেদের অভিযোগ সেই সময় মাওবাদীদেরও নন্দীগ্রাম আন্দোলনে সামিল করে রাস্তা কেটে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার পর এলাকা বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। সেই নন্দীগ্রামের সঙ্গে যুক্ত রয়েছিল সিঙ্গুরও।

কার্যত নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুরের জেরেই পশ্চিমবঙ্গে বামেদের ভিত আলগা হয়ে যায়। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনেই তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। তারপর ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বামেরা পশ্চিমবঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পরে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। তারপর থেকে প্রত্যেক নির্বাচনের বামেদের ভোট কমেছে। শেষে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে বামেরা।


শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয় ত্রিপুরাতেও বামেদের ভোট করেছে। ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে বামেদের দ্বিতীয় স্থানে ছিল, প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল প্রায় ৪৪ শতাংশ, সেই বামেরা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয়স্থানে চলে যায়।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *