ভারতে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কলঙ্ক আরও কমাতে জোট বাঁধল মেডিক্স গ্লোবাল ও এমপাওয়ার

ভারতে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কলঙ্ক আরও কমাতে জোট বাঁধল মেডিক্স গ্লোবাল ও এমপাওয়ার

রিপোর্ট -দেবাঞ্জন দাস : সারা পৃথিবীতে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী অতিমারী যা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
মেডিক্স হল এক বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিচর্যা কোম্পানি, যারা লক্ষ লক্ষ ক্রেতাকে ৩০০-র বেশি নিজস্ব ডাক্তারের দল এবং ৪,৫০০-র বেশি বিশ্বের অগ্রগণ্য বিশেষজ্ঞদের এক অনুমোদিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্বমানের পরিষেবা দেয়।

এই কোম্পানি এমপাওয়ারের সঙ্গে এক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপে প্রবেশ করেছে। এমপাওয়ার হল আদিত্য বিড়লা এডুকেশন ট্রাস্টের উদ্যোগ এবং ভারতে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিসরে এরা নেতৃস্থানীয়। ৬০০ অভিজ্ঞ মানসিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পেশাদারদের জড়ো করে এরা বিশ্বমানের,

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হস্তক্ষেপের কৌশল ব্যবহার করে ১২১ মিলিয়নের বেশি জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই যৌথ উদ্যোগের অঙ্গ হিসাবে এমপাওয়ার ও মেডিক্স ভারতে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরও নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য ইন্টিগ্রেটেড এবং উন্নত প্রযুক্তি সমাধান জোগাবে।


একত্রে এমপাওয়ার ও মেডিক্স ভারতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যেভাবে কথাবার্তা হয় তার ধরনই বদলে দেবে, সাহায্য পাওয়ার নতুন পথ বাতলে দেবে। এই পার্টনারশিপ মানসিক ও অনুভূতিগত কাউন্সেলিং ও মেন্টরশিপের প্রতি এক নতুন, সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি আনছে। এটি দেশের যুবসমাজের কাছে পৌঁছবার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

এই স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের অঙ্গ হিসাবে মেডিক্স ইন্ডিয়া এমপাওয়ারের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাকে বিভিন্ন পরিচর্যা প্রকল্পের মধ্যে একত্রে দেবে। ফলে মেডিক্স ইন্ডিয়ার ক্রেতা এবং পার্টনাররা, যার মধ্যে অগ্রগণ্য বিমাকারী, কর্পোরেট কর্মচারী এবং অন্যান্য অংশীদাররা আছেন, এমপাওয়ার ক্লিনিকগুলো এবং ভার্চুয়াল মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর নাগাল পাবেন।

এই পার্টনারশিপের মাধ্যমে এমপাওয়ার জ্ঞান ও পরিষেবা সঙ্গী হিসাবে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিসরে তাদের যে বিশেষ পারদর্শিতা তা প্রয়োগ করবে। বিভিন্ন প্রমাণিত মানসিক স্বাস্থ্য সমাধান জোগাবে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা চান এমন রোগীদের থেরাপির ব্যবস্থা করবে।

অন্যদিকে মেডিক্স গুণমান নিশ্চিত করায়, লক্ষ্য স্থির করার কৌশলে, ক্লিনিকাল পথ, ডিজিটাল মানসিক ও শারীরিক মূল্যায়ন এবং ফলাফল পরিমাপ ও অ্যানালিটিক্স ইত্যাদিতে নিজেদের বিশ্বব্যাপী বিশেষ পারদর্শিতাকে ব্যবহার করবে। ফলে এতদিন ভারতে যেভাবে মানসিক সহায়তাকে দেখা হয়েছে এবং ব্যবহার করা হয়েছে তার ভোল বদলে যাবে।


এই পার্টনারশিপ সম্পর্কে ডঃ নীরজা বিড়লা, ফাউন্ডার অ্যান্ড চেয়ারপার্সন অফ এমপাওয়ার, বললেন “এমপাওয়ার বরাবরই ভারতের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের কাজ করেছে এবং এই পার্টনারশিপ এই ক্ষেত্রে পরিবর্ত আনার শক্তি হিসাবে আমাদের অবস্থানকে আরও জোরদার করার দিকে আরও একটা পদক্ষেপ।

শারীরিক অসুখে ভোগা লোকেদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। এর পিছনে মনস্তাত্ত্বিক, শারীরিক এবং সামাজিক কারণের এক জটিল মিশ্রণ থাকে। তাই সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্যে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই যৌথ উদ্যোগ রোগীদের সার্বিক সমাধান জোগাবে। তাঁরা এখন থেকে একই প্ল্যাটফর্ম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা নিতে পারবেন।

আশা করি এই ধরনের যৌথ উদ্যোগ ভারতের সার্বিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় এক নতুন অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হবে এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব জোগাবে। ফলে আরও গবেষণা, আদানপ্রদান, নাগাল বাড়ানোয় উৎসাহ দেবে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যে সামাজিক কলঙ্ক যুক্ত হয়ে আছে তা মুছে ফেলতে সাহায্য করবে।”


মিস সিগাল অ্যাৎজমন, প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড সিইও অফ মেডিক্স বললেন “আমরা এমপাওয়ারের সঙ্গে জুটি বাঁধতে পেরে গর্বিত, কারণ আমরা এই দুই ব্র্যান্ডের মধ্যে জোরালো মিল দেখতে পাই, যা মানুষের জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।

মানসিক স্বাস্থ্য অনেকরকম অসুবিধার একটা অনেক বড় গ্রুপ, যা মানুষের চিন্তা করা, অনুভব করা এবং কাজ করার উপর প্রভাব ফেলে। আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের তরুণ প্রজন্মের উপরে বিভিন্ন কারণে ক্রমশ চাপ বাড়ছে এবং প্রায়ই তাদের কাছে এই চ্যালেঞ্জগুলো ইতিবাচকভাবে সামলানোর উপায় থাকে না।

আমাদের লক্ষ্য মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যে কলঙ্ক যুক্ত হয়ে আছে সেটা দূর করা এবং কথাবার্তা, আলাপ আলোচনায় উৎসাহ দেওয়া। একইসঙ্গে চ্যালেঞ্জগুলো জয় করার বাস্তবসম্মত এবং কার্যকরী উপায় জোগানো।”


আজকের ভারতে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, মানসিক স্বাস্থ্য সবচেয়ে সমস্যাসংকুল বিষয়গুলোর অন্যতম। হু-র ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ রিপোর্ট ২০২২ অনুসারে, গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভোগা মানুষ সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় ১০ থেকে ২০ বছর আগে মারা যায় প্রধানত প্রতিরোধযোগ্য শারীরিক অসুখে।

“কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য ও ভাল থাকা” শীর্ষক ডেলয়েটের ২০২২ সার্ভে অনুসারে গত বছর ভারতের কর্মীবাহিনীর ৮০% মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। এই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান সত্ত্বেও সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরদাতাদের প্রায় ৩৯% তাঁদের যে লক্ষণগুলো দেখা দিয়েছে তার জন্য চিকিৎসার খোঁজ করেন না।


এই পার্টনারশিপের মাধ্যমে এমপাওয়ার ও মেডিক্স ২০২৩ সাল থেকে ভারতে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে দায়বদ্ধ!

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *