ওয়েব ডেস্ক; : প্রাচীন যুগ থেকেই ভারতে বিদ্যাচর্চার এক অনন্য ঐতিহ্য উদ্ভাবন এবং অনুসন্ধানের এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। গণিত-চর্চা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে ভারত পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আমাদের অবদান অনস্বীকার্য। ২০২২-এর ১৫ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লালকেল্লার প্রাকার থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশের সেই গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করেন।
ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গবেষণা ও উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অমৃতকালে গবেষণা ও উন্নয়নের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনি গুরুত্ব দেন। অনুসন্ধিৎসু চিন্তাভাবনাকে লালিত করতে তাঁর অনুপ্রেরণামূলক স্লোগান “জয় অনুসন্ধান” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২০-র জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দেশজুড়ে এক প্রাণবন্ত গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষতা এবং দেশের অগ্রগতির জন্য নানা ক্ষেত্রকে শনাক্ত করা হবে। নতুন এই নীতি দেশজুড়ে উন্নত গবেষণার এক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়ক। এর ফলে, শিক্ষার গুণমান যেমন বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ২০২৪-এর ২৫ নভেম্বর এক দেশ এক অনুদান (ওএনওএস) ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করতে অনুমোদন দেয়। এর ফলে, দেশের সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রী,
শিক্ষক-শিক্ষিকা, গবেষক এবং বৈজ্ঞানিকরা আন্তর্জাতিক স্তরে বিখ্যাত জার্নাল এবং নিবন্ধগুলি পড়তে পারবেন। এর সাহায্যে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত সম্পদ ভারতীয় শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বদের কাছে সহজলভ্য হবে। ফলস্বরূপ, উদ্ভাবন এবং গবেষণার কাজে গতি আসবে।
২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত এবং আত্মনির্ভর করে তুলতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এই ব্যবস্থাপনা তাতে সহায়ক হবে। অত্যাধুনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা, প্রযুক্তি ক্ষেত্রের বিকাশ এবং স্থিতিশীল প্রগতির জন্য গৃহীত পরিকল্পনা কার্যকর করতে সুবিধা হবে। আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্ভাবন ও গবেষণায় প্রথম সারিতে ভারতের সুনিশ্চিত স্থান হবে। ৬,৩০০-র বেশি সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রী,
শিক্ষক-শিক্ষিকা গবেষক এবং বৈজ্ঞানিকরা, আন্তর্জাতিক স্তরে ৩০টি বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থার ১৩ হাজারের বেশি গবেষণা সংক্রান্ত পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনগুলি পড়তে পারবেন। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, সমাজবিজ্ঞান এবং আর্থিক ক্ষেত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ ছাত্রছাত্রী এবং গবেষক এর ফলে উপকৃত হবেন। দেশের টিয়ার ২ এবং ৩ এর অন্তর্ভুক্ত শহরগুলিতে যেসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে গবেষণা ও উদ্ভাবনের কাজে গতি আসবে।
এই ব্যবস্থাপনায় শহরাঞ্চলের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কেন্দ্রীয় সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিদ্যাচর্চায় সুবিধা হবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সহজেই আন্তর্জাতিক মানের পত্রপত্রিকাগুলি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এর ফলে, ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত, অর্থাৎ বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্য পূরণ হবে।
পত্রপত্রিকাগুলির অনুদানের পুরো প্রক্রিয়াটি INFLIBNET (ইনফরমেশন অ্যান্ড লাইব্রেরি নেটওয়ার্ক)-এর মাধ্যমে সম্পাদিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্বায়ত্তশাসিত এই আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রটি গড়ে তুলবে। এখান থেকে সংশ্লিষ্ট পত্রপত্রিকাগুলি সহজেই যাতে ব্যবহারকারীদের কাছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পৌঁছে দেওয়া যায় তা নিশ্চিত করা হবে।
২০২৫, ২০২৬ এবং ২০২৭ – এই তিন বছরে পিএম-ওএনওএস ব্যবস্থাপনার জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি আগামী তিন বছর বিভিন্ন পত্রপত্রিকার গ্রাহক হতে পারবে। এছাড়াও, বাছাই করা উন্নতমানের প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য ১৫০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনগুলির লেখকদের জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে।
এক দেশ এক অনুদান ব্যবস্থাপনাটি অনুসন্ধান ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এএনআরএফ)-এর পরিপূরক হবে। এএনআরএফ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে সহায়তা করে থাকে। ওএনওএস-এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, যেসব গবেষকরা বিশ্ববিখ্যাত পত্রপত্রিকাগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কোনো নিবন্ধ লিখবেন, তাঁদের ওই তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে যাতে সত্ত্বাধিকার বাবদ কম অর্থ ব্যয় করতে হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আলাপ আলোচনা করতে সহায়তা করবে ।
এক দেশ এক অনুদান ব্যবস্থাপনাটি ভারতের গবেষণা ক্ষেত্রে বিরাট এক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আন্তর্জাতিক স্তরের ৩০টি প্রকাশনা সংস্থার ১৩ হাজারের বেশি পত্রপত্রিকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে গবেষক, বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে পৌঁছনোর মধ্য দিয়ে ভারতে গবেষণা সংক্রান্ত পরিকাঠামোর যে ঘাটতি ছিল তা পূরণ হবে। দেশের শিক্ষা এবং গবেষণা ক্ষেত্রের মানোন্নয়নের জন্য এটি পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে।
বর্তমানে ১০টি কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রক এবং দপ্তরকে নিয়ে যে কনসর্টিয়াম রয়েছে, তার সঙ্গে দেশের বহু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে এক দেশ এক অনুদান ব্যবস্থাপনাটি কার্যকর করা হবে। এর ফলে নতুন প্রজন্মের গবেষক এবং ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যাচর্চার জন্য আরও উন্নত সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
দেশের বিদ্যাচর্চার সংস্কারের ক্ষেত্রে যে বৃহৎ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, ওএনওএস তারই অঙ্গ। এর প্রথম পর্যায়ে অনুদানের মাধ্যমে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ব্যবহার করতে পারবে। পাশাপাশি, ভারতীয় পত্রপত্রিকাগুলির প্রচারের কাজেও এটি সহায়ক হবে।