দূষণ থেকে পরিত্রাণে দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টির আয়োজন! কোন কৌশল অবলম্বন, কীভাবেই বা ঘটানো হবে

দূষণ থেকে পরিত্রাণে দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টির আয়োজন! কোন কৌশল অবলম্বন, কীভাবেই বা ঘটানো হবে

ব্যুরো রিপোর্ট: দিল্লিতে দূষণ মাত্রা ছাড়া। এবার দিল্লি-এনসিআরে দূষণ কমাতে এমন কিছু হতে চলেছে, যা এখনও পর্যন্ত হয়নি। যা হতে চলেছে, তা হল কৃত্রিম বৃষ্টি। দিল্লির বাতাসের মান উন্নত করতে কৃত্রিম বৃষ্টির প্রস্তুতি নিচ্ছে কেজরিওয়াল সরকার।কেজরিওয়াল সরকারের পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই বুধবার আইআইটি কানপুরের বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এই বৈঠকের পরে মন্ত্রী বলেছেন, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং অনুমতি পাওয়া গেলে ২১ ও ২২ নভেম্বর কৃত্রিম বৃষ্টি করা হবে।দিল্লির বাতাসে দূষণের বিষ। গত কয়েকদিন ধরে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৫০০-র ওপরে রয়েছে। সাধারণ মানুষের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে দূষণ থেকে মুক্তি দিতে এখন কৃত্রিম বৃষ্টির প্রস্তুতি চলছে। তবে দূষণ কমাতে কৃত্রিম বৃষ্টির কথা অনেকদিন ধরেই চলছে। কয়েকমাস আগেই দিল্লি সরকার কানপুর আইআইটির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছিল।তবে প্রশ্ন উঠছে কৃত্রিম বৃষ্টিতে কি দূষণ কমবে।

বিশেষজ্ঞরা এব্যাপারে আশাবাদী। এবছর দিল্লিতে কম বৃষ্টিপাতকেও সেখানকার বাতাসের মান খারাপ হওয়ার অন্।তম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে বর্ষা শেষ হওয়ার পর বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসে দূষিত পদার্থ জমেছে।অক্টোবরে বৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ না করার মতো।

২০২১-এর অক্টোবরে দিল্লিতে বৃষ্টি হয়েছিল ১২৩ মিমি। ২০২২-এ ১২৯ মিমি আর এই বছরের অক্টোবরে হয়েছে ৫.৪ মিমি।ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত করা হবে। কানপুর আইআইটির বিশেষজ্ঞরা ২০১৭ সাল থেকে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরির প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন।

চলতি বছরের জুনে কানপুর আইআইটি এতে সফল হয়।পরীক্ষার সময় ছোট বিমান পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়েছিল। এরপর ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেঘে রাসায়নিক পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে জলের ফোঁটা তৈরি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়।প্রসঙ্গত ১৯৪০-এর দশক থেকে ক্লাউড সিডিং নিয়ে কাজ চলছে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্লাউড সিডিংকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে ভিয়েতনাম সেনাবাহিনীর সাপ্লাই চেন কেটে গিয়েছিল। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জমিতে জল জমে গিয়েছিল। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনও পোক্ত প্রমাণ নেই।তবে রাষ্ট্রসংঘের আবহাওয়া সংস্থার অনুমান বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশ ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তিতে মেঘ তৈরির চেষ্টা করছে।

তার মধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ রয়েছে।ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়ায় ছোট বিমানগুলি মেঘের মধ্যে দিয়ে যায়। সেই সময় বিমান থেকে সিলভার আয়োডাইড, শুকনো বরফ ও ক্লোরাইড ছড়াতে থাকে। ফলে মেঘে জলের ফোঁটা জমে। জলের ফোঁটা পরে বৃষ্টিতে পরিণত হয় এবং মাটিতে পড়ে।

ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে তৈরি কৃত্রিম বৃষ্টি স্বাভাবিক বৃষ্টির থেকে বেশি তীব্র হয়। তবে তা ব্যবহৃত রাসায়নিকের পরিমাণরে ওপরে নির্ভর করে।চিনের রাজধানী বেজিং-এ দূষণ কমাতে এবং আবহাওয়া পরিষ্কার রাখতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত করা হয়। ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিকের সময় বৃষ্টি যাতে খেলা পণ্ড না করে,

তার জন্য চিন আবহাওয়া পরিবর্তন পদ্ধতি ব্যবহার করে আগাম বৃষ্টি তৈরি করেছিল।বর্তমান পরিস্থিতিতে চিন ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়াতে যাচ্ছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ৫৫ লক্ষ বর্গমিটার এলাকার কৃত্রিম বৃষ্টির আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে তারা।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *