ব্যুরো রিপোর্ট: দুর্গাপুজোর আগেই শুরু হয়ে গেল দুর্যোগের সময়। এবার মা দুর্গা ঘোটকে আগমন করছেন বলে আগেই জানিয়েছে পঞ্জিকা। যার ফল হিসাবে ‘ছত্রভঙ্গ’ এর বার্তা দিয়েছেন জ্যোতিষশাস্ত্রবিদরা। এদিকে, বাংলার আকাশ থেকে যেন দুর্যোগের মেঘ কাটতেই চাইছে না।
সবে মাত্র নিম্নচাপের প্রভাব পর পর দিনের বর্ষণে কলকাতা কার্যত ক্লান্ত! এরপর নতুন করে পড়শী রাজ্যে সাইক্লোনের প্রভাবের ফলে বাংলার আবহাওয়ায় তার চরম প্রভাব পড়তে চলেছে। জানা গিয়েছে, ওড়িশার গোপালপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গপত্তনমের মাঝের এলাকায় এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে।
এর প্রভাবে বাংলার পরিস্থিতি কোনদিকে যেতে চলেছে জানা যাক।আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে যে, এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলায় সেভাবে বড় প্রভাব পড়বে না। তবে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে দোসর বৃষ্টি।
ইতিমধ্যেই রাজ্য প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দিঘায় উপকূল থেকে মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে আসা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন স্বয়ং মৎসমন্ত্রী।
বুধবার পর্যন্ত মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।জানা গিয়েছে , উত্তরবঙ্গে আপাতত কোনওভাবেই ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস নেই।
তবে আপাতত বর্ষা উত্তরের আকাশ থেকে বিদায় নিচ্ছে না। বিভিন্ন জেলার কোথাও না কোথাও প্রবল বর্ষণ জারি থাকবে। উত্তরবঙ্গের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত জারি থাকবে। তবে আপাতত উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলে জানা গিয়েছে।
বাংলার প্রায় সমস্ত জেলাতেই সোমবারের মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ হতে পারে। তবে রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানা গিয়েছে ।
এদিকে সোমবার থেকে কার্যত মেঘের ঘনঘটা জারি থাকবে। ফলে বর্ষণের মাত্রাও প্রবল হারে নামবে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত কলকাতা সহ একাধিক এলাকায় প্রবল বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মঙ্গলবার থেকে কলকাতা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে।
কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে কলকাতা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ।জানা গিয়েছে, উত্তর পূর্ব ও সংলগ্ন পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপটি ছিল, তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়।
শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যের মধ্যে সেটি ঘূর্ণি ঝড়ের রূপ নিতে থাকে। পরে সেই ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ওড়িশার দক্ষিণ উপকূলে গোপালপুরে এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গপত্তনমের কাছে আছড়ে পড়ার কথা।
জানা গিয়েছে রবিবার বিকেলের দিকে এই ল্যান্ডফল হতে চলেছে।আবহাওয়া দফতরের খবর অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে। আপাতত ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার বেগে তা সাগরে ফুঁসছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, সোমবার বিকেল থেকে যখন এই ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপে পরিণত হবে, তখন তার বেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার থাকবে বলে জানা গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়িই সাইক্লোন গুলাব ফুঁসে উঠেই শক্তি হারাবে বলে জানা গিয়েছে।
আবহবিদদের মতে, গুলাব আছড়ে পড়তেই তার গতিবেগ কমতে থাকবে। ধীরে ধীরে তা দুর্বল হবে। ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মাঝে আছড়ে পড়তেই মঙ্গলবার সকালে মধ্যপ্রদেশের দিকে যাবে। পরে তাগুজরাতের দিকে যেতে পারে বলে অনুমান আবহবিদদের।
এদিকে,বাংলার জেলাগুলিতে ৫০ থেকে ৬০ কিমি বেগে বইতে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া, এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। জানা গিয়েছে, বুধবার কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা,
হাওড়া, হুগলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, একা ঘূর্ণিঝড়ে রক্ষে নেই তারপরেই আসবে ঘূর্ণাবর্ত। জানা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের পরই আসতে চলেছে ঘূর্ণাবর্ত । আর তা নিম্মচাপ হিসাবে বাংলায় আছড়ে পড়বে।