মেডিকা, কলকাতা এবং ইউনিসেফ এবার একসাথে কাজ করবে কর্মরত মায়েদের জন্য

মেডিকা, কলকাতা এবং ইউনিসেফ এবার একসাথে কাজ করবে কর্মরত মায়েদের জন্য

রিপোর্ট -দেবাঞ্জন দাস: স্তন্যদুগ্ধপান সপ্তাহ উদযাপন করার ক্ষেত্রে, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটালস , পূর্ব ভারতের প্রথম হসপিটাল হিসেবে হাত মেলাল ইউনিসেফের সাথে কর্মরত মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজনে।


২ই এবং ৩ই আগস্ট ২০২৩, তারা আয়োজন করলো একটি তথ্যসমৃদ্ধ ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার ওয়ার্কশপ, আর তারপর ছিল খুব প্রয়োজনীয় ‘ব্রেস্টফিডিং ওয়ার্কশপ’। দোসরা আগস্ট অভ্যাগতদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডঃ নিকোলা জুডিথ ফ্লিন, এমডি, বিভাগীয় প্রধান,

পেডিয়াট্রিক্স এবং নিওনেটোলজি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, আর উদয়ন লাহিড়ী, সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং ডিরেক্টর, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল এবং অয়নাভ দেবগুপ্ত, সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেডিকা হসপিটাল।

এই ওয়ার্কশপ ছিল ২ই আগস্ট, যার তত্বাবধানে ছিলেন প্রখ্যাত ক্যাঙ্গারু কেয়ার মাস্টার ট্রেনারারা। এছাড়াও ছিলেন সিনিয়র পারুল দত্ত, সিনিয়র নার্সিং প্রফেশনাল এবং পেডিয়াট্রিক ও নিওনেটাল নার্সিং ফ্যাকাল্টি; প্রাক্তন সিনিয়র সিস্টার টিউটর, নিওনেটলজি বিভাগ,

ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন এ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমইআর) এবং শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল (এসএসকেএম) হাসপাতাল কলকাতা; প্রফেসর অসীম মল্লিক, প্রফেসর এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের নিওনেটাল বিভাগের ইনচার্জ; ডঃ বিজন সাহা,

অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, আইপিজিএমইআর এবং এসএসকেএম হাসপাতাল, কলকাতা। ডঃ বন্দনা পি ভা টিয়া, হেলথ অফিসার, পশ্চিমবঙ্গ উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফের তরফ থেকে।
১৯৯২ সালে ডব্লিউএবিএ (ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশন)

একটি স্তন্যপান সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করে যেখানে লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে স্তন্যপানের উপকারিতা তুলে ধরা যেহেতু এটি কমে গিয়েছে এবং শিশু মৃত্যুহার বেড়েছে আগের থেকে।

বর্তমানে বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ পালন করার ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করছে হু, ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএবিএ। এই বছর এই বিশেষ কর্মসূচির বিষয় হল ‘এনেবেল ব্রেস্টফিডিং – মেকিং অ্যা ডিফারেন্স ফর ওয়ার্কিং প্যারেন্টস’ – যেখানে কর্মরত মায়েদের সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে।

কিছু চ্যালেঞ্জ যেগুলো রয়েই গিয়েছে সেগুলো হল:

  • সারা পৃথিবীতে আধ বিলিয়নের বেশি কর্মরত মহিলাকে মেটার্নিটি সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা নেই দেশীয় আইনগুলোতে।
  • মাত্র ২০% দেশে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা তার মহিলা কর্মচারীদের সবেতন বিশ্রাম দিয়ে থাকেন এবং স্তন্যদানের জন্য ন্যুনতম পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করে থাকেন ।
  • বিশ্ব জুড়ে ছয় মাসের কম বয়সের শিশুদের মধ্যে মাত্র অর্ধেকের ও কম স্তন্যদুগ্ধ পান করতে পারে
    কলকাতার মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে, পেডিয়াট্রিক বিভাগ স্তন্যদুগ্ধ পান করানো মায়েদের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে। হসপিটালে চত্বরে একটি বিশেষ নার্সিং এরিয়া রয়েছে যেখানে আরামের সাথে বসা যায় এবং অটোমেটিক এবং ম্যানুয়াল ব্রেস্ট পাম্প রয়েছে সেখানে। এছাড়া স্টেরাইল বোতল এবং আলাদা করে বোতল গরম করার ব্যবস্থা রয়েছে। হসপিটাল একটি রেফ্রিজারেটর ব্যবস্থা করেছে যেটি সবসময় নজর রাখা হয় এবং এখানে স্তন্যদুগ্ধ সংরক্ষণ করার পরিকাঠামো রয়েছে। চাকুরীরত স্তন্যদানকারী মহিলাদের পর্যাপ্ত ব্রেক নেওয়ার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয় যাতে তারা স্তন্যদুগ্ধ রাখতে পারে।
    পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফ যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে স্তন্যদুগ্ধ পান নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার নিয়ে। এই বিষয়ে তারা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রগুলির সাথে যৌথ ভাবে কাজ করছে। বলাই বাহুল্য, ইউনিসেফের কাছে একটি বড় মাইলস্টোন যে তারা মেডিকার পেডিয়াট্রিক বিভাগের সাথে একযোগে কাজ করছে এবং নিজেদের দক্ষতা এবং সবরকম সহায়তা করছে এই বিষয়ে। মেডিকা প্রথম প্রাইভেট হসপিটাল যারা এই সহায়তা পেল। একযোগে শুধুমাত্র মেডিকার নার্স এবং ডাক্তাররা ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেশন পাবে এমন নয়, বরং অন্যান্য মেট্রোপলিটন হসপিটালের সাথে যুক্ত যারা, তারাও পাবে।

ডঃ নিকোলা জুডিথ ফ্লিন, এমডি, বিভাগীয় প্রধান, পেডিয়াট্রিক্স এবং নিওনেটোলজি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, কলকাতা, জানান,” স্তন্যদুগ্ধ পান শুধুমাত্র মৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে নয়, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেন কোন শিশুর জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যদুগ্ধ পান করানোর দিকটি বারবার তুলে ধরি। এছাড়া পরবর্তী ছয় মাস বিশেষভাবে নার্সিং এর দিকটি তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে।

এছাড়া জন্মের পর দুই বছর পর্যন্ত নিয়মিত স্তন্যদুগ্ধ পান করানোর বিষয় তো আছেই। যদি এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো সম্ভব হয়, তাহলে বছর ২০,০০০ মায়ের মৃত্যু এবং ৮২৩,০০০ নবজাতকের মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হবে। স্তন্যদানকারী কর্মরত মহিলাদের সাহায্য করার জন্য মানসিকতা পরিবর্তন খুব দরকার। তারা কাজের জায়গায় অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।

তবে আরো সচেতনতা, শিক্ষা এবং বোঝাপড়ার মধ্যে তাদেরকে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে সাহায্য করা সম্ভব। বলাই বাহুল্য, সঠিক ভাবে পরিচালনা এবং স্তন্যদুগ্ধ সংরক্ষণ খুব প্রয়োজনীয় একটি দিক কর্মরত মায়েদের জন্য যারা কোন ভাবে পরিমাণের দিক থেকে ঘাটতি অনুভব করছেন।

সমাজের অংশীদার হয়ে আমরা যেন এক হই, মা এবং তার শিশুকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিই এবং জীবনের প্রথম ১০০০ দিনের খেয়াল রাখার ক্ষেত্রে যৌথ ভাবে এগিয়ে চলি। আমরা সবাই একত্র হয়ে, স্তন্যদায়ী মায়েদের সাহায্য ও সহায়তা দিয়ে আমাদের বাড়িতে এবং আমাদের কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে পারি আজকের শিশুদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যত।”

আর উদয়ন লাহিড়ী, সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল বলেন,” আমাদের নার্স এবং ডাক্তারদের জন্য ইউনিসেফের সাথে প্রথমবার এক যোগে কাজ করা, নতুন অনেক কিছু জানা ও উপলব্ধি হওয়া সত্যি এক অনন্য অভিজ্ঞতা। আমি অনেক ধন্যবাদ দিতে চাই ডঃ বন্দনা পি ভাটিয়া কে,

যিনি পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফ হেলথ অফিসার হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। ওনারা সাহায্য ছাড়া এত বড় কর্মকাণ্ড অসম্ভব ছিল। এছাড়া আমি ধন্যবাদ দিতে চাই সেই সব অসাধারণ ট্রেনারদের যারা এই ওয়ার্কশপের জন্য তাদের মহামূল্যবান সময় দিয়েছেন।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমরা সামনের দিনে এরকম আরো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাই যা স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের দিকটি আরো মজবুত করবে এবং সামাজিক স্তরে একটি বৃহত্তর প্রভাব ফেলার দিকে আমরা এগোতে পারব।”

অয়নাভ দেবগুপ্ত, সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেডিকা হসপিটাল বলেন,”মেডিকা হসপিটালে আমার সকলেই রোগীদের বিশ্বমানের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা খুবই গর্বিত যে এই কর্মকাণ্ডে ইউনিসেফকে পার্টনার হিসেবে পেয়ে। আমাদের এই একসাথে পথ চলা আমাদের সংস্থার জন্য একটি বড় মাইলস্টোন, যা অগুণিত মা এবং শিশুদের জন্য আমাদের দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতার দিকটি তুলে ধরে।

এই নতুন সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে আমরা একটি নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি – যেখানে শিক্ষা, ক্ষমতায়ন এবং অবশ্যই মায়েদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে, যার স্তন্যদুগ্ধ পানের মত একটি মহান কর্তব্যে তাদের সাহায্য করার সুযোগ রয়েছে এবং এর সাথে নবজাতকদের জীবনে সেরা শুরু করার সুযোগ দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।”

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *