করোনা-কাণ্ড নিয়ে তুমুল ঝামেলা সাও পাওলোয়, বন্ধ ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ম্যাচ

করোনা-কাণ্ড নিয়ে তুমুল ঝামেলা সাও পাওলোয়, বন্ধ ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ম্যাচ

ব্যুরো রিপোর্ট:  সাও পাওলোতে বিচিত্র ঘটনা! বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ব্রাজিল ও আর্জেন্তিনার ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মাঠে ঢুকে পড়লেন ব্রাজিলের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা।

তাও আবার পুলিশ নিয়ে। আচমকা এই ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় খেলা। করোনা-বিধি ভাঙায় চার ফুটবলারকে ধরতেই এই পদক্ষেপ বলে জানা গিয়েছে।

বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে আট ম্যাচে ব্রাজিল সাত ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছে। আর্জেন্তিনার পয়েন্ট সাত ম্য়াচে ১৫।

কোপা আমেরিকার পর রবিবারই মেসি ও নেইমার দেশের হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন। আর্জেন্তিনা ব্রাজিলে এসে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করতে ব্রাজিলের বিজয়রথ যেমন থামাতে চেয়েছিল,

তেমনই সেলেকাওরা কোপা আমেরিকা ফাইনালে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারত। কিন্তু খেলা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই নাটকীয়ভাবে আপাতত যবনিকা পড়ল বিশ্ব ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে।

খেলা শুরুর মিনিট ছয়েক পরেই দেখা যায়, সাইডলাইনের ধারে দুই দলের ফুটবলারা জড়ো হয়েছেন। কোচ-সহ সাপোর্ট স্টাফরা রয়েছেন। পুলিশের উপস্থিতির পাশাপাশি এমন কিছু ব্যক্তিকে দেখা যায় যাঁদের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল না।

খেলা বন্ধ থাকতেই জানা যায়, ব্রাজিলের স্বাস্থ্য দফতর আনভিসা আধিকারিকরা মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। রীতিমতো ব্রাজিলিয়ান ফেডারেল পুলিশকর্মীদের নিয়ে।

তাঁরা প্রথমে গিয়ে কথা বলেন ব্রাজিলের নেইমার ও কাজিমিরোর সঙ্গে। এরপরই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যায় আর্জেন্তিনা দল। রেফারিই আর্জেন্তিনা দলকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন।

একটু পরে স্পষ্ট হয় আসল কারণ। আর্জেন্তিনার চার ফুটবলার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আসর থেকে সরাসরি ব্রাজিলে এসে কোয়ারান্টিনে থাকেননি, ব্রাজিলের কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধ অমান্য করেছেন।

তাঁদের মধ্যে তিন ফুটবলার এদিন প্রথম একাদশেও ছিলেন। তাঁরা হলেন জিওভানি লে সেলসো, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ও সার্হিও রোমেরো)। তাঁদেরই চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ব্রাজিলের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা ও পুলিশ।

আর্জেন্তিনা দল মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর বেরিয়ে যান রেফারি ও ম্যাচ অফিসিয়ালরা। তবে ব্রাজিল দলের প্রায় সকলেই মাঠেই ছিলেন। আধিকারিকদের সঙ্গে কথাবার্তা চলতে থাকে। মেসিকে দেখা যায় টানেলে দানি আলভেসের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে।

এরপর মেসি ও আর্জেন্তিনার কোচ স্কালোনি গিয়ে ব্রাজিলের কোচ তিতে এবং নেইমার ও কাজিমিরোর সঙ্গে কথা বলেন। ব্রাজিলের ফুটবল কর্তারা ছাড়াও সেখানে ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। নেইমার ও স্কালোনি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। তিতেকে দেখা যায় অনুবাদকের ভূমিকায়। যদিও কাজের

জানানো হয়, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলে এই ম্যাচে খেলতে এসেছিলেন চার ফুটবলার। তাঁদেরই মাঠ থেকে বের করতে পুলিশ নিয়ে ঢুকে পড়েন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। এই ফুটবলাররা ব্রাজিলে পৌঁছে নিভৃতবাসে থাকার নিয়ম ভেঙেছেন বলে অভিযোগ।

আনভিসার তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছি না আমরা। সে কারণেই স্থানীয় স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে ফুটবলারদের নিভৃতবাসে পাঠাতে।

কোয়ারান্টিনে না থাকা ফুটবলারদের কোনও কাজে অংশগ্রহণ বা ব্রাজিলের ভূখণ্ডে থাকার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। ব্রাজিলের কোচ নেইমার-সহ যখন সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন দেখা যায় আর্জেন্তিনার ফুটবলাররা ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছেন একে একে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয় আর্জেন্তিনা ও ব্রাজিলের মধ্যে ম্যাচ আপাতত স্থগিত। কনমেবলের তরফে জানানো হয়, ম্যাচ রেফারির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্রাজিল ও আর্জেন্তিনার মধ্যে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচটি স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।

রেফারি ও ম্যাচ কমিশনার ফিফার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে রিপোর্ট জমা দেবেন। তারপরই পরবর্তী পদক্ষেপ চূড়ান্ত হবে। যেহেতু বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব ফিফার প্রতিযোগিতা, তাই বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

ইপিএলের আসর থেকে আসা আর্জেন্তিনার চার ফুটবলার জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা না মানাতেই যে এই ঘটনা ঘটেছে তা স্পষ্ট। যদিও আর্জেন্তিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়া বলেছেন, যা হলো তা খুব খারাপ ভাবমূর্তিই তুলে ধরল।

চারজন হঠাৎ মাঠে ঢুকে পড়লেন এবং কনমেবল ফুটবলারদের ড্রেসিংরুমে চলে যেতে বলল! সাউথ আমেরিকার বিভিন্ন টুর্নামেন্ট যখন খেলা হয় তখন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত নজরদারির মধ্যেই তা হয়, ফলে এখানে মিথ্যা কথা বলার অবকাশ নেই।

প্রতিটি দেশেই স্বাস্থ্য দফতর কিছু প্রোটোকল জারি করে এবং আমরা সকলেই তা মেনে চলতে বাধ্য। এরই মধ্যে উঠে আসছে নানা কথা। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বারণ উপেক্ষা করেই নাকি ফুটবলারদের প্রথমে গোপন জায়গায় রেখে পরে খেলতে নামিয়ে দেয় আর্জেন্তিনা। আবার এমন কথাও শোনা গিয়েছে যে,

আর্জেন্তিনা দলের কাছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ বা এখন যে ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে সে ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে স্থগিত হয়ে যাওয়া ম্যাচ আদৌ হবে নাকি ব্রাজিলই পুরো পয়েন্ট পাবে তা স্পষ্ট হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে। এরই মধ্যো বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের খেলার কথা পেরুর বিরুদ্ধে। আর্জেন্তিনার দেশের মাটিতে বলিভিয়ার বিরুদ্ধে খেলার কথা।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *