পশ্চিমবঙ্গে বেড়েই চলেছে ব্লাডার ক্যান্সারের ঘটনা; স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিশেষজ্ঞরা মানুষকে জীবনযাত্রা বদলাতে এবং তাড়াতাড়ি স্ক্রিনিং করাতে অনুরোধ করছেন

পশ্চিমবঙ্গে বেড়েই চলেছে ব্লাডার ক্যান্সারের ঘটনা; স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিশেষজ্ঞরা মানুষকে জীবনযাত্রা বদলাতে এবং তাড়াতাড়ি স্ক্রিনিং করাতে অনুরোধ করছেন

রিপোর্ট- দেবাঞ্জন দাস : বিভিন্ন স্বাধীন সমীক্ষা এবং ভারতের জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি (PBCR) অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে ব্লাডার ক্যান্সারের ঘটনা বেড়েই চলেছে, যা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিচর্যা বাস্তুতন্ত্রের উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করছে। ভারতে প্রত্যেক বছর ২০,০০০ নতুন ব্লাডার ক্যান্সারের ঘটনা জানা যায় আর পশ্চিমবঙ্গে এই অসুখের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য।

পশ্চিমবঙ্গে ব্লাডার ক্যান্সারের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য অনেকগুলো ব্যাপারকে দায়ী করা যেতে পারে, যার মধ্যে পানীয় জলে আর্সেনিকের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, উঁচু মাত্রায় তামাক সেবন এবং লক্ষণ অগ্রাহ্য করা রয়েছে। এ থেকে এই অঞ্চলের সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার জটিল প্রকৃতি চিহ্নিত হয়।

উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষের ডাই কারখানায় কাজ করাও এর অন্যতম কারণ। এবারের ক্যান্সার সচেতনতা দিবসে স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যার মোকাবিলায় মানুষকে জীবনযাত্রার বদল ঘটাতে এবং তাড়াতাড়ি স্ক্রিনিং করাতে অনুরোধ করছেন।

এই বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তরুণ জিন্দাল, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইউরো-অঙ্কোলজি অ্যান্ড রোবোটিক সার্জারি, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালটি হসপিটাল, কলকাতা, বললেন “আমরা কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা দেখেছি, যা থেকে জানা গেছে পশ্চিমবঙ্গে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক।

বিশেষ করে অচিহ্নিত বা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন জলের উৎসগুলোতে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া একটা তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ব্লাডার ক্যান্সারের কারণ হয়ে থাকতে পারে।

আর্সেনিক থেকে ক্ষতির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে বহুল প্রচলিত তামাক সেবনের অভ্যাসও ব্লাডার ক্যান্সারের ঘটনায় যথেষ্ট অবদান রেখেছে। তামাকজাত দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ব্লাডার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, ফলে এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামনে চ্যালেঞ্জ বেড়ে যায়।”

তিনি আরও বলেন “পেচ্ছাপে রক্ত (হেমাটুরিয়া) আসার মত ব্লাডার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো প্রায়শই লোকে খেয়াল করে না বা সে সম্পর্কে যত্ন নেয় না। ফলে চিকিৎসকের নজর পড়তে দেরি হয়ে যায়। ওই ধরনের লক্ষণগুলো চিনে নেওয়া এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ ওগুলো ব্লাডার ক্যান্সারের উপস্থিতির ইঙ্গিত হতে পারে।

এছাড়া পেচ্ছাপে যদি বারবার রক্ত আসে, বিশেষ করে ব্যথা ছাড়াই, তাহলে তৎক্ষণাৎ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত মূত্রনালীর ক্যান্সার যে হয়নি সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। এই মুহূর্তে মেডিকাল প্রযুক্তির যা উন্নতি হয়েছে তাতে ব্লাডার ক্যান্সারের কার্যকরী চিকিৎসার বিকল্প আছে।

এর মধ্যে আছে দ্য ভিঞ্চির মত রোবোটিক-অ্যাসিস্টেড সার্জারির মত অতি উন্নত প্রযুক্তি। তবে কার্যকরী চিকিৎসার জন্যে তাড়াতাড়ি রোগনির্ণয় জরুরি। সুতরাং হেমাটুরিয়ার মত লক্ষণের মেডিকাল মূল্যায়ন যথাসময়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”

চিকিৎসার অন্যান্য বিকল্প সম্পর্কে ডাঃ জিন্দাল মন্তব্য করেন “অস্ত্রোপচার ছাড়া কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি আর রেডিয়েশন থেরাপির মত অন্যান্য বিকল্প চিকিৎসাও আছে। তবে ব্লাডার ক্যান্সারের চিকিৎসায় রোবোটিক-অ্যাসিস্টেড সার্জারি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উন্নতি হিসাবে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।

দ্য ভিঞ্চির মত উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার অভূতপূর্ব নিখুঁত এবং দ্রুত অস্ত্রোপচার সম্ভব করেছে। ফলে রোগীরা অল্প সময়ে সেরে উঠছেন এবং উন্নততর পরিণাম পাচ্ছেন। এই চিকিৎসা পদ্ধতির অন্য সুবিধাগুলোর মধ্যে আছে কম রক্তপাত, কম সময় হাসপাতালে থাকা, দ্রুততর আরোগ্য, শরীরে ছোট ফুটো করার ফলে কম ক্ষত তৈরি হওয়া এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাওয়া।”

প্রতিরোধ আরোগ্যের চেয়ে ভাল। সুষম আহার, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ার স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাসগুলো ব্লাডার ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। তামাকজাত পণ্য এড়ানো এবং সম্ভাব্য কারসিনোজেন, যেমন কিছু কিছু ডাই এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পাউন্ডের মত রাসায়নিক দ্রব্য,

এড়িয়ে চলা; সঙ্গে নিয়মিত মেডিকাল চেক-আপ এবং অস্বাভাবিক লক্ষণ (বিশেষ করে পেচ্ছাপে রক্ত) দেখলে সঙ্গে সঙ্গে মনোযোগ দেওয়া ব্লাডার ক্যান্সার বেশিদূর এগোবার আগেই সমাধান সম্ভব করতে পারে।

ঝুঁকি আর লক্ষণগুলোর ব্যাপারে গণসচেতনতা তৈরি করা, তাড়াতাড়ি স্ক্রিনিংয়ের প্রচার করা এবং উন্নত চিকিৎসার নাগাল নিশ্চিত করা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিচর্যার এই সমস্যার মোকাবিলায় জরুরি।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *