ব্যুরো রিপোর্ট: টোকিও অলিম্পিকের একদম শেষ মুহুর্তে সোনা জিতে ভারতকে গর্বিত করেছেন নীরজ চোপড়া। অলিম্পিকের অ্যাথলেটিক্সে প্রথমবার সোনালী হওয়ার গর্বে গর্বিত হয়েছেন ভারতবাসী। টোকিও গেমসে এরকমই একাধিক প্রথম ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দেশ। বিদায় বেলায় সেই তালিকার দিকে নজর ফেরানো যাক। দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে এবারের অলিম্পিকে ছাপ ফেলে গিয়েছেন পিভি সিন্ধু, মীরাবাঈ চানুরা।
২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্স করেছিল ভারত। ওই গেমস থেকে দুটি রুপো ও চারটি ব্রোঞ্জ সহ মোট ৬টি পদক জিতেছিল দেশ। বজরং পুনিয়ার ব্রোঞ্জের পর নীরজ চোপড়ার সোনার হাত ধরে পদক জয়ের নিরিখে টোকিও গেমসে নতুন রেকর্ড গড়ল টিম ইন্ডিয়া।
একটি সোনা, দুটি রুপো এবং চারটি ব্রোঞ্জ সহ চলতি অলিম্পিকে ভারতের সর্বমোট পদক সংখ্যা সাতে পৌঁছে গিয়েছে। খুব কাছে পৌঁছে ভারতীয় মহিলা হকি দল, গল্ফার অদিতি অশোক ও কুস্তিগীর দীপক পুনিয়ার পদক হাতছাড়া না হলে সংখ্যাটা দশে পৌঁছে যেতে পারত।
১৯০০ সালে শেষবার অ্যাথলেটিক্সে পদক জিতেছিল ভারত। তারপর থেকে অলিম্পিকের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড থেকে ভারতের পদক জয়ের ভাঁড়ার শূন্যই ছিল। এমনকী ২০০৮ সালের বেজিং গেমসে প্রতিযোগিতায় নিজেদের ব্যক্তিগত ইভেন্টের প্রথম সোনা জিতেছিল দেশ।
১৩ বছর পর অলিম্পিকের ব্যক্তিগত ইভেন্ট থেকে ফের সোনা জয়ের স্বাদ পেল ভারত। জ্যাভলিন থ্রো তো বটেই, বিশ্বের সেরা ক্রীড়াযঞ্জের অ্যাথলেটিক্সে প্রথম সোনা জিতল ভারত। ইতিহাস রচনা করলেন নীরজ চোপড়া। শনিবার টোকিও গেমসের জ্যাভলিন থ্রোর ফাইনালের প্রথম প্রচেষ্টাতেই ৮৭.০৩ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেন নীরজ।
দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ৮৭.৫৮ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নীরজের জ্যাভেলিন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চেক প্রজাতন্ত্রের জ্যাকুব ভাদলেজ ৮৬.৬৭ মিটার দূরত্বে জ্যাভলিন ছোঁড়েন। তৃতীয় প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হন চেকের প্রজাতন্ত্রেরই ভিটেজসলাভ ভেসেলে। ৮৫.৪৪ মিটার দূরত্বে জ্যাভলিন তিনি ব্রোঞ্জ জিততে সক্ষম হন।
টোকিও অলিম্পিকে মহিলাদের ব্যাডমিন্টনের ব্যক্তিগত ইভেন্ট থেকে ব্রোঞ্জ জিতেছেন পিভি সিন্ধু। পাঁচ বছর আগে রিও অলিম্পিকের একই ইভেন্ট থেকে রুপো জিতেছিলেন ভারতীয় শাটলার। দেশের প্রথম অ্যাথলিট হিসেবে পরপর দুই অলিম্পিক থেকে পদক জেতার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন পিভি।
প্রাক্তন কুস্তিগীর সুশীল কুমারের পর দ্বিতীয় ভারতীয় অ্যাথলিট হিসেবে দুই অলিম্পিক থেকে পদক জিতেছেন হায়দরাবাদি। ২০০৮ ও ২০১২ সালের অলিম্পিকের কুস্তি ইভেন্টে যথাক্রমে ব্রোঞ্জ ও রুপো জিতেছিলেন সুশীল।
ভারোত্তোলক মীরাবাঈ চানুর হাত ধরে টোকিও অলিম্পিক থেকে প্রথম পদক হাসিল করেছিল ভারত। রুপো জিতেছিলেন মণিপুরী অ্যাথলিট। যা একাধারে অলিম্পিকের ভারোত্তোলনে দেশের দ্বিতীয় পদক, অন্যদিকে প্রথম রুপোর পদকও বটে। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকের ভারোত্তোলন বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন ভারতের কারনাম মালেশ্বরী।
অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথমবার হকির সেমিফাইনালে পৌঁছে নজির গড়ে ভারতের মহিলা দল। যদিও শেষ চারের মোকাবিলায় আর্জেন্তিনার কাছে হেরে যান রানি রামপালরা। তবু অলিম্পিক থেকে প্রথমবার পদক জয়ের সুযোগ পেয়েছিল ওমেন ইন ব্লু। ব্রোঞ্জ পদকের সেই ম্যাচও হেরে যায় ভারতের মহিলা হকি দল।
টোকিও অলিম্পিকে মহিলা গল্ফের ব্যক্তিগত ইভেন্টে একটুর জন্য পদক হাতছাড়া করেন ভারতের অদিতি অশোক। দেশের প্রথম গল্ফার হিসেবে এই সফলতা পান তিনি। চার রাউন্ডের প্রতিযোগিতার প্রথম তিন দিন প্রথম তিনে নিজের জায়গা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন অদিতি। যা এক নজির।
টোকিও গেমসের হাত ধরে প্রথম ভারতীয় হিসেবে অলিম্পিকের লাইটওয়েট ডাবল স্কালস ইভেন্টের সেমিফাইনালে পৌঁছনোর নজির গড়েছেন অর্জুন লাল জাট ও অরবিন্দ সিং। ইভেন্টে তাঁরা ১১তম স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন। যা অলিম্পিকের ওই ইভেন্টে এখনও পর্যন্ত ভারতের সেরা পারফরম্যান্স।
টোকিও অলিম্পিকে মহিলাদের ফেন্সিং ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন ভারতের সিএ ভবানী দেবী। অলিম্পিকের উক্ত ইভেন্টে দেশের থেকে প্রথমবার কোনও অ্যাথলিট অংশ নিলেন। প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেও দ্বিতীয় রাউন্ডে হার হজম করতে হয় ভবানী দেবীকে।