গত ১০ বছরে ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে যেভাবে রিসার্চ করা হয়েছে তা আগে হয়নি: ডা. চন্দ্রকান্ত এম ভি

গত ১০ বছরে ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে যেভাবে রিসার্চ করা হয়েছে তা আগে হয়নি: ডা. চন্দ্রকান্ত এম ভি

রিপোর্ট -দেবাঞ্জন দাস: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ভারতবর্ষে ২০১৮ সালে ১.১৬ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং আক্রান্তদের মধ্যে ৭ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮০০ জন মানুষ মারা গেছেন। প্রবীণ মানুষদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি। ৬৫ উত্তীর্ণদের মধ্যে শতকরা ৬ জন ক্যানসার আক্রান্ত হন।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ২০৫০ সালে ক্যানসার আক্রান্তের হার বেড়ে দাঁড়াবে ১৫.৯% এ। বয়স্ক মানুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার, লাং ক্যানসার ও বাওয়েল ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। ৬৫ বছরের বেশি বয়সে ক্যানসারের ঝুঁকি তরুণদের তুলনায় প্রায় ১১ গুণ বেশি।

তবে ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রন করা যায়। সঠিক চিকিৎসার সাহায্যে ক্যানসারের বিস্তার আটকে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায় অনায়াসে।

শনিবার এবিষয়ে সাধারন মানুষকে সচেতন করতে নারায়না সুপার স্পেসালিটি হাসপাতাল হাওড়ার ক্যানসার চিকিৎসকেরা এই আলোচনা চক্রের আয়োজন করেন।

উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের অ্যাকাডেমিক প্রধান, ডা. চন্দ্রকান্ত এম ভি; ক্যানসার বিভাগের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. ভিবেক আগরওয়াল; ব্রেস্ট সার্জারি ও অংকোপ্ল্যাস্টির বিশেষজ্ঞ ডা. নেহা চৌধুরী ।

আমরা প্রায়ই শুনি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ক্যানসার সারে বা সুস্থতার পর আবার ফিরে আসে না। কিন্তু সেই শুরুতে ক্যানসারের উপসর্গগুলি এতটাই সাধারন ও মামুলি থাকে যে মানুষ বিশ্বাসই করতে পারেন না যে এগুলি আসলে ক্যানসারের লক্ষন।

ডা. চন্দ্রকান্ত এম ভি বিভিন্ন ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গ ব্যাখ্যা করেন। লাং ক্যানসারের উপসর্গ স্বরের পরিবর্তন, শুকনো কাশি, বা ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ ব্রেস্টে ব্যথাহীন গুটলির মতো যে কোন সাধারণ অসুখবিসুখ যদি দেড় থেকে দুই মাস থাকে ও প্রচলিত চিকিৎসায় না সারে তবে অবশ্যই ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন গ্লোবাল ওয়ার্মিং, গড় আয়ুবৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে বিশ্বজুড়েই ক্যানসার বাড়ছে। এর মধ্যেই স্মোকিং, জর্দা গুটখার মতো তামাক চিবানর বদভ্যাস, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুডের ব্যবহার ছেড়ে দেওয়া বা বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং করানর মতো কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে ক্যানসারকে অনেকটাই এড়ান যায়।
তিনি আরো জানান ,

” গত ১০ বছরে ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে যেভাবে রিসার্চ করা হয়েছে তা আগে হয়নি। এর ফলে একজন অ্যাডভান্স ক্যান্সার রোগী পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে ক্যান্সার মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসবে। এই লক্ষ্যে প্রতিহত করার জন্য প্রথম ক্ষেত্রেই এই রোগের শনাক্তকরণ জরুরী।”

ডা. ভিবেক আগরওয়াল এবিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি আরো বলেন এই রোগের ক্ষেত্রে সচেতনতা হল সবচেয়ে বড় জিনিস সেক্ষেত্রে স্কুল পর্যায়ে থেকে ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের আরো এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

ডা. নেহা চৌধুরী বলেন ক্যানসার সনাক্ত হলে আতংকিত না হতে। আজকের দিনে ক্যন্সার চিকিৎসার অনেক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে, বাজারে আসছে নতুন ওষুধ। উন্নত থেরাপির মতো চিকিৎসা করে ব্রেস্ট ক্যানসার, লাং ক্যানসার বা রক্তের বিভিন্ন ক্যানসারের মতো একদা মারণ রোগকে হারিয়ে দিয়ে অনেকেই এখন বছরের পর বছর সুস্থ জীবনযাপন করছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন ক্যানসার সারভাইভারও। তাঁরা অনুষ্ঠানে অসুখের সময়ের নানা অভিজ্ঞতা বর্ননা করে ক্যানসার রোগীদের বিপদের দিনে ভয় না পেয়ে চিকিৎসার ওপর ভরসা রাখতে বলেন।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *