আরও উন্নতমানের সার্জারি; পূর্ব ভারতে প্রথম দা ভিঞ্চি XI রোবট নিয়ে আসলো অ্যাপোলো হসপিটালস

আরও উন্নতমানের সার্জারি; পূর্ব ভারতে প্রথম দা ভিঞ্চি XI রোবট নিয়ে আসলো অ্যাপোলো হসপিটালস

রিপোর্ট- দেবাঞ্জন দাস : আধুনিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোবোটিক সার্জারি নাম বারবারই উঠে আসছে চিকিৎসা মহল থেকে। প্রাথমিক সময়ে যদিও এই বিষয় নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব ছিল কিন্তু বর্তমান সময়ে রোবটিক সার্জারিতে পাওয়া ফল সেই দ্বন্দ্বগুলোকে একেবারেই নস্যাৎ করে দিয়েছে।

  অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল কলকাতা, পূর্ব ভারতে প্রথমবারের মতো দা ভিঞ্চি XI রোবট অর্জন করেছে। আজ থেকে এক দশক আগে পূর্ব ভারতের প্রথম হাসপাতাল যা দা ভিঞ্চি সি রোবট এনে আন্তর্জাতিক লেটেস্ট টেকনোলজিতে এক ধাপ এগিয়েছে।

XI রোবট গাইনোকোলজি, ইউরোলজি, অঙ্কোলজি ,কার্ডিওলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি এবং অন্যান্য বিষয়ে  সার্জনদের সহায়তা করতে পারে। রোবটটি তলপেটের শরীরের অংশগুলি অ্যাক্সেস করার জন্য অত্যন্ত সহায়ক যেখানে খালি হাতে পৌঁছানো কঠিন।

দা ভিঞ্চি XI রোবট সার্জনদের উন্নত দৃশ্যমানতা এবং দক্ষতার সঙ্গে মিনিমালি ইনভেসিভ  অস্ত্রোপচার করতে দেয়, যা সঠিক নড়ন চড়ন এবং সামগ্রিক ভাবে রোগীর নিরাপত্তার সহায়তা করে। এটি সার্জিকাল প্রসিজিওরের আগে রোগীর শরীরে ডকিং মেশিনে কম সময়ে উচ্চ স্তরের নির্ভুলতা বজায় রাখে। রোগীরা অপেক্ষাকৃত ছোট দাগ, ন্যূনতম রক্ত ক্ষয় এবং দ্রুত আরোগ্য সহ হাসপাতালে কম সময়ে থেকে উপকৃত হয়।

এই উপলক্ষ্যে ইস্টার্ন রিজিয়ন,অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপের্ সিইও রানা দাশগুপ্ত বলেন, “পূর্ব ভারতের সেরা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর মধ্যে থাকার কারণে, আমরা সবসময় আমাদের রোগীদের জন্য লেটেস্ট টেকনোলজি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করি। এটি আমাদের সমস্ত রোগীদের জন্য সহজে চিকিৎসার জন্য আরেকটি উন্নত মানের প্রচেষ্টা।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত,অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস কলকাতার ডিএমএস,  ডা.সুরিন্দর সিং ভাটিয়া বলেন , “রোবোটিক সার্জারি হল মিনিমালি ইনভেসিভ অস্ত্রোপচারের পরবর্তী প্রজন্ম।সার্জিকাল রোবটগুলি অনেক মিনিমালি ইনভেসিভ অস্ত্রোপচারের

জন্য অত্যন্ত উপকারী কারণ এটি একটি ছোট অস্ত্রোপচার এলাকায় মানুষের ক্ষমতার বাইরে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতিগুলির সুনির্দিষ্ট নড়াচড়ায় সহায়তা করে। দা ভিঞ্চি সি হল মডার্ন ফাংশনালিটি সমৃদ্ধ একটি অত্যাধুনিক রোবট যা সার্জনদের পরিচালনার পাশাপাশি রোগীদের নিরাপত্তা এবং দ্রুত আরোগ্যে সহায়তা করে।”

গত ৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার এপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস এর পক্ষ থেকে পূর্ব ভারতে প্রথমবার দা ভিঞ্চি XI রোবট নিয়ে আসার জন্য এক সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়।
উপস্থিত ছিলেন, ডা. প্রকার দাশগুপ্ত;  সিনিয়র ইউরোলজিস্ট ডা. অমিত ঘোষ, ডা. বিনয় মহেন্দ্র, হেড এন্ড নেক ওন্ক সার্জেন ডা. শান্তনু পাঁজা।

রোবোটিক সার্জারির পুরো পদ্ধতির মধ্যে ডাক্তার কনসোলে বসে থাকা মনিটরের সঙ্গে অস্ত্রোপচারের এলাকা এবং রোবোটিক অস্ত্র ডাক্তারকে অপারেশনের জন্য সহায়তা করে। একটি বাহুতে একটি উচ্চ ম্যাগনিফিকেশন 3D ক্যামেরা রয়েছে যা একটি কী ছিদ্রের

মাধ্যমে পেটে ঢোকানো হয় এবং অস্ত্রোপচারের স্থানটির একটি হাই-ডেফিনিশন, ম্যাগনিফাইড (12×), 3-ডি ভিউ প্রদান করে। অন্যান্য যান্ত্রিক বাহুতে অস্ত্রোপচারের যন্ত্র সংযুক্ত রয়েছে যা মানুষের হাত ও কব্জির নড়াচড়া নকল করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

রোবোটিক সার্জারির প্রাথমিক সুবিধা হল অপারেশনের জন্য শরীরে প্রথাগত অপারেশনের চেয়ে অনেক ছোটখাটো ছিদ্র করা  তাই, অনেক কম জটিলতার সঙ্গে আরোগ্য দ্রুত হয়। এছাড়াও এটি কম

ব্যথা, সংক্রমণের কোন সম্ভাবনা না থাকার কারণে অপারেশনে ছিদ্রটি কাটার ক্ষেত্রে শরীরে স্বাভাবিক আকারের চেয়ে অনেক ছোট অংশে অপারেট করা, কম সময় হাসপাতালে থাকা এবং দ্রুত আরোগ্য আর অপেক্ষাকৃত কম সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা।

ডা. প্রকার দাশগুপ্ত বলেন, ” রোবটিক সার্জারি খুব সহজে এবং নিখুঁতভাবে যে কোন অপারেশন করতে সক্ষম। এক্ষেত্রে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং খুব কম দিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়।

প্রাথমিক ক্ষেত্রে যখন এই রোবটিক সার্জারি এসেছিল তার থেকে বর্তমান সময়ে মানুষ এই রোবটিক সার্জারিতে বিশ্বাস বা আস্থা রাখছেন। এমন কিছু কিছু জায়গা যেখানে চিকিৎসকদের হাত পৌঁছাতে পারেনা সেখানে রূপটিক সার্জারি মূল ভূমিকা পালন করে।”

ডা. অমিত ঘোষ বলেন, ” বড় সার্জেন মানে বড় কাঁটাছেড়া। কিন্তু বর্তমানে এই প্রবাদটি উঠে গেছে। বর্তমানে ভারতে ১০০টি দ্যা ভিঞ্চির রোবট রয়েছে এবং ৩০ টির বেশি ‘নন দা ভিঞ্চি’ রোবট রয়েছে। দেশের বহু বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতাল এই রোবট বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে ।

পরিসংখ্যান দেখতে গেলে গত বছর সারা বিশ্বে ২ লক্ষ রোবোটিক সার্জারি হয়েছে সেখানে ভারতবর্ষে সংখ্যাটি ১৪০০০। আমাদের এই রাজ্যেও খুব তাড়াতাড়ি এই রোবট সরকারি হাসপাতালে আসতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে এই সংখ্যাটি দেশে আরো বাড়বে। আগামী দিনে ভারতবর্ষ রোবোটিক ক্যাপিটাল ইন ওয়ার্ল্ড হতে চলেছে।”

ডা.  শান্তনু পাঁজা বিশেষ করে সামাজিক সচেতনতার উপর নিজের বক্তব্য রাখেন। আইসিএমার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রত্যেক বছর নতুন করে ৫ লক্ষের বেশি মাথা এবং ঘাড় ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

উল্লেখ্য ডাক্তারবাবুরা বারবারই বলছেন যতদিন যাবে, যত এই রোবোটিক সার্জারির সংখ্যা বাড়বে ততো এর খরচ অনেকটাই কমবে। দেশে বর্তমানে ৭০ টির বেশি হসপিটাল বা মেডিকেল ইনস্টিটিউটে এই রোবট রয়েছে। বর্তমান সময়ে ইউরোলজি সার্জারির ক্ষেত্রে ৯৪ শতাংশ সার্জারি কিন্তু এই রোবটিক সার্জারি হচ্ছে।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *