ব্যুরো রিপোর্ট: মেসি ম্যাজিকই কাতারে ফিফা বিশ্বকাপের শেষ আটে পৌঁছে দিল আর্জেন্তিনাকে। সেমিফাইনালে দিয়েগো মারাদোনার দেশের সামনে নেদারল্যান্ডস। আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামের গ্যালারি আজ ছিল নীল-সাদায় পরিপূর্ণ। বল দখলের লড়াইয়ে আগাগোড়া এগিয়ে থাকা আর্জেন্তিনা এদিন রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচে হারিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়াকে।
খেলার ফল ২-১।ম্যাচের ৩৫ মিনিটের মাথায় গোল করে আর্জেন্তিনাকে এগিয়ে দেন লিওনেল মেসি। দেশ ও ক্লাব মিলিয়ে এদিন ১০০০তম ম্যাচটি খেললেন এলএম টেন। গোলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭৮৯। বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে এদিনই প্রথম গোল করলেন তিনি। চলতি বিশ্বকাপে এটি তাঁর তৃতীয় গোল। সোনার বুটের দৌড়ে তিনি ধরে ফেললেন এনার ভ্যালেন্সিয়া, কিলিয়ান এমবাপে, কডি গাকপো, আলভারো মোরাতা ও মার্কাস রাশফোর্ডকে।
সকলেই এখনও অবধি তিনটি করে গোল করেছেন।ফ্রি কিক থেকে মেসি শট নিয়েছিলেন। তা হ্যারি সুটার আটকাতে সক্ষম হলেও ফের বল জমা পড়ে আর্জেন্তিনার ফুটবলারদের পায়ে। ম্যাক অ্যালিস্টার পাস বাড়ান ওতামেন্ডিকে। তাঁর ফার্স্ট টাচ থেকেই অত্যন্ত কুশলীভাবে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণভাগ আগলানোর দায়িত্বে থাকা ফুটবলারদের পরাস্ত করে গোলে বল পাঠিয়ে দেন মেসি। শটটি আটকানোর মতো পরিস্থিতিতেই ছিলেন না অজি গোলকিপার।
বিরতিতে মেসির এই গোলেই এগিয়ে ছিল আর্জেন্তিনা।প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল আর্জেন্তিনা। একের পর এক আক্রমণ তৈরির প্রয়াস চালালেও বারবারই তা প্রতিহত হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণের জটলায়। এর মধ্যে খান দুয়েক কর্নার আদায় করতে পারলেও তা থেকে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি সকারুরা। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও আর্জেন্তিনা প্রেসিং ফুটবল খেলে সকারুদের বিব্রত করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে থাকে।
কাই রাওলেসের খারাপ ব্যাক পাস অস্বস্তি বাড়ায় অস্ট্রেলীয় গোলকিপার ম্যাট রায়ানের। তাঁর পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে বল জালে জড়িয়ে আর্জেন্তিনাকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন হুলিয়ান আলভারেজ (Julian Alvarez)। এদিন আনহেল দি মারিয়াকে প্রথম একাদশে রাখেননি আর্জেন্তিনার কোচ স্কালোনি। আলেহান্দ্রো গোমেজকে শুরু থেকে খেলান।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরাতে সকারুরা মরিয়া থাকবে আঁচ করে গোমেজকে তুলে নিয়ে লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে নামিয়ে রক্ষণভাগে ফুটবলার বাড়ান আর্জেন্তিনার হেড কোচ। তার মিনিট সাতেক পরেই আসে আর্জেন্তিনার দ্বিতীয় গোলটি।দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর পাল্টা আক্রমণের রাস্তা বেছে নেয় মরিয়া অস্ট্রেলিয়া। সুফল মেলে ম্যাচের ৭৭ মিনিটে। ৬০ মিনিটের মাথায় পরিবর্ত হিসেবে নামা ক্রেগ গুডউইনের জোরালো শট এঞ্জো ফার্নান্দেজের (Enjo Fernandes) মুখে লেগে জালে জড়িয়ে যায়।
ফলে ব্যবধান কমাতে সক্ষম হয় অস্ট্রেলিয়া। ৮২ মিনিটে ভাগ্য সহায় থাকলে সমতা ফিরিয়ে ফেলত সকারুরা। গোলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন আজিজ বেহিচ। তাঁর স্লাইডিং শট কোনওরকমে বিপন্মুক্ত করেন লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। শেষের দিকে বেশ কয়েকটি ভালো আক্রমণ তুলে এনেছিল আর্জেন্তিনা।
লৌতারো ফার্নান্দেজ, লিওনেল মেসিরা লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে আর্জেন্তিনার জয়ের ব্যবধান আরও বাড়াতে পারতেন। শেষ বাঁশি বাজার কয়েক সেকেন্ড আগে অস্ট্রেলিয়ার কুওলের গোলমুখী শট অনবদ্য দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন আর্জেন্তিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। এই গোলটি হলে ম্যাচ গড়াত অতিরিক্ত সময়ে। যদিও তা হয়নি। মার্তিনেজের এই সেভ অজিদের শেষ আটে পৌঁছনো নিশ্চিত করে দেয়। ৯ ডিসেম্বর আর্জেন্তিনা খেলবে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে।